স্বদেশ ডেস্ক: করোনা মহামারি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। রোগীদের ঠাঁই দিতে না পেরে, অনেক হাসপাতাল তাদেরকে ফেরত পাঠাচ্ছে। অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাপুর থেকে আকাশপথে আনা হচ্ছে অক্সিজেন। একদিনে সেখানে রেকর্ড ৭২৮ জন মারা গেছেন করোনায়। আক্রান্ত ও মৃতের দিক দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীর্ষে এখন এই দেশটি। এরপরেই রয়েছে ফিলিপাইন।
করোনা সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রমণ চালিয়েছে রাজধানী জাকার্তায়। সেখানকার হাসপাতালগুলোর শতকরা ৯০ ভাগে রোগীতে পূর্ণ। দ্বিতীয় বৃহৎ শহর সুরাবায়ার কমপক্ষে এক ডজন হাসপাতাল নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ রোগীকে সামাল দিতে পারছে না। সুরাবায়ার একটি হাসপাতালের মুখপাত্র আইসিইউতে জ্যাম লেগে আছে বলে পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, চিকিৎসকরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যেসব রোগীর জন্য ভেন্টিলেটর প্রয়োজন তাদের জন্য আর কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। সব আইসিইউ রোগীতে ভর্তি।
ওই মুখপাত্র আরো বলেন, আমাদের ওপর প্রচ- চাপ। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ভেঙে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য আমরা স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছি।
এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন। তার মধ্যে কমপক্ষে এক ডজন আছেন, যাদেরকে পুরোপুরি টিকা দেয়া হয়েছিল। মরিয়া হয়ে অসুস্থ ব্যক্তির পরিবার অক্সিজেন খুঁজে ফিরছেন। অনেকে বাড়িতেই মারা যাচ্ছেন। প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণ সংক্রমণ কমিয়ে আনতে করোনা বিরোধী বিধিনিষেধ জোরালো করতে পথে নেমেছে হাজার হাজার সেনা সদস্য ও পুলিশ। দেশটিতে মঙ্গলবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ১৮৯ জন। মারা গেছেন ৭২৮ জন। এক মাসেরও কম সময় আগে মৃত্যুর যে সংখ্যা ছিল তার তুলনায় এই সংখ্যা সাতগুন বেশি। শুধু জাকার্তায় প্রতিদিন ১০ গুন বেশি লাশ কবর দেয়া হচ্ছে। এই চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন গোরস্তানের কর্মীরা।
মঙ্গলবার জাকার্তা বলেছে, পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় ১০ হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আসছে। এর মধ্যে একটি হারকিউলিস কার্গো বিমানে করে কিছু কনসেনট্রেটর আনা হয়েছে। একই সঙ্গে চীনসহ অন্য দেশগুলোর কাছেও সাহায্য চেয়েছে ইন্দোনেশিয়া সরকার।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেশে উৎপাদিত সব অক্সিজেন হাসপাতালগুলোতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হয়েছে প্রধান দ্বীপ জাভা। ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ২৭ কোটি মানুষের অর্ধেকেরও বেশি বসবাস করেন এই দ্বীপে। করোনা বিষয়ে নতুন আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র মন্ত্রী লুহুত বিনসার পান্ডজাইতান বলেছেন, দেশে দিনে ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হলে যা করতে হবে তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তার টিম। এমনও হতে পারে যে, দিনো ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার পর্যন্ত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তার ভাষায়, তবে আমরা আশা করছি তা ঘটবে না।
নতুন নিয়মের অধীনে সাপ্তাহিক ছুটির দিন থেকে জাভা জুড়ে সব অফিস, মসজিদ, পার্ক, শপিং মল, রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে বড় রকমের নিয়ম লঙ্ঘনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জাভার সেমারাং শহরে যেসব দোকান বন্ধ রাখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তাদের পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিছু মানুষ বাসায় বসে কাজ করার নির্দেশ অমান্য করার কারণে মঙ্গলবার কয়েক ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জাকার্তার গভর্নর আনিস বাসওয়েদান।
সুরাবায়ার মেয়র সপ্তাহান্তে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, যারা টিকা বিষয়ক নিয়ম মানবে না তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে স্থানীয় কবরস্তান দেখিয়ে আনতে হবে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাস নিয়ে ভুয়া খবরে ভরা। ফলে অনেক মানুষ টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এখন পর্যন্ত ২৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে শতকরা মাত্র ৫ ভাগ মানুষ টিকার দুটি ডোজই নিয়েছেন।